Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

উপজেলার পটভুমি

চলনবিলের মানসকন্যা সিংড়া উপজেলা নাটোর জেলার অন্যতম প্রাচীন থানা। বেশ কিছুদিন পূর্বে চলনবিল তথা সমগ্র সিংড়া উপজেলাই জলমগ্ন থাকত, উপজেলার তিন চতুর্থাংশ সারা বছর জলমগ্ন থাকত। প্রফেসর আব্দুল হামিদ টি, কে রচিত “চলনবিলের ইতিকথা” নামক গ্রন্থ হতে জানা যায় এখানে জলদস্যুদের আস্তানা ছিল।

    চলনবিলের বিশাল জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ জন্মাতো, যেমনঃ- শাপলা, পদ্ম, নলখাগড়া ও হোগলা ইত্যাদি। আরেক ধরনের জলজ উদ্ভিদ জন্মাতো যার ফল ত্রিভুজাকৃতির, যা পানিফল নামে পরিচিত। মোঘল বাদশাহ আকবরের রাজত্বের সময় পূর্বাঞ্চল হতে কর আদায়ে চলনবিলের মধ্যদিয়ে নৌযানের সাহায্যে যাতায়াত করতে গিয়ে ঐ পানি ফলের এলাকায় এসে নৌযানগুলো বাধাপ্রাপ্ত হত। মোঘল যাত্রীগণ উক্ত পানি ফলের খোসা ছাড়িয়ে ভীত সম্ভ্রস্তভাবে কিঞ্চিত আস্বাদনে দেখলেন এটা একটা সুস্বাদু ফল বিশেষ। এরপর শুরু হয় নাম দেয়ার পালা। মোঘল দরবারে ঐতিহ্যবাহী খাবার সিঙ্গারার মত হওয়ায় এর নাম দেয়া হয় সিঙ্গার। আর বিলের এ অংশটির নাম দেয়া হয় “সিঙ্গার চলনবিল”। কালের বিবর্তনে এর নাম সিংড়া’য় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে সিংড়া নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। ১৯৯৮ সালে উপজেলা সদর নিয়ে সিংড়া পৌরসভা গঠিত হয়।

    নাটোরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় ১৭৪৮ খ্রিঃ রাজা রামাকান্তের মৃত্যুর পর রাজ্য পরিচালনায় পরামর্শদাতা মহিয়সী রানী ভবানীর হাতে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাজশাহীর (নাটোর) জমিদারীর ভার অর্পণ করেন। রানী ভবানী নিঃসন্তান স্বামীর জমিদারী প্রাপ্ত হন ও অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে ১২,৯৯৯ বর্গমাইল বিস্তৃত এই রাজশাহী (নাটোর) জমিদারী অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সহিত পরিচালনা করেন। রাণী ভবানীর এই রাজ্যের রাজধানী ছিল নাটোর।

    নাটোর রাজবাড়ী থেকে বগুড়া জেলার পীঠস্থান ভবানীপুরের সংগে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রানী ভবাানী ৩০ মাইল লম্বা রাস্তা ও অনেক পুল নির্মাণ করেন। পথিকদের সুবিধার জন্য রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপন ও পান্থশালা নির্মাণ করেন। এ রাস্তাটি রানী ভবানী জাংগাল নামে পরিচিত। রাস্তাটি নাটোর থেকে শুরু হয়ে সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ও পাকুরিয়ার পাশ দিয়ে বিনগ্রাম, বামিহাল, রানীহাটের মধ্যেদিয়ে ভবানীপুরে গিয়ে পৌঁছেছে। তিনি পাকুরিয়াতে ৩০০ টি পুকুর খনন করেন। বিনগ্রামের নিকট রানীর জাংগালের উপর প্রতিষ্ঠিত পুলটি এখনও রানী ভবানীর কীর্তি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। অবশিষ্ট সবই ১৩০৪ বাংলা সালের প্রবল ভূমিকম্পে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।

    কলম গ্রামের এক কৃতি সন্তান দেওয়ান দয়ারাম রায়, রাজা রমাকান্তের মন্ত্রী ছিলেন যিনি সে সময় ওয়ারেন হেষ্টিংস বলে পরিচিত ছিলেন। নানা কিংবদন্তী ছড়িয়ে আছে তিসিখালীর মাজার নিয়ে; সেখানে এখনও ঘাসী দেওয়ান পীর স্মরণে প্রতি বছর মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চৌগ্রামের ভগ্নপ্রায় রাজদরবার এই অঞ্চলের উজ্জ্বল ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী। সিংড়ায় জন্মেছিলেন অংকের যাদুকর বৃটিশ সরকার প্রদত্ত সি, আই, ই, ও স্যার উপাধী খ্যাত যদুনাথ সরকার, ভারতীয় কংগ্রেসের বঙ্গদেশ শাখার সেক্রেটারি শরবিন্দু ভট্রাচার্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অগ্রপথিক মাদার বক্স।

সিংড়া ধান ও মাছ সমৃদ্ধ এলাকা। সিংড়ার প্রকৃতির তিনটি রং - বর্ষায় দিগন্ত বিস্তৃত পানির রূপালী রং, শীতের শেষ হতে চৈত্র পর্যন্ত বোরো ধানের প্রশান্তিময় সবুজ এবং বৈশাখ জুড়ে পাকা ধানের সোনালী রং। এ তিন রংয়ে ভরা সিংড়ার মানুষের জীবন, জীবিকা।